"মেসিকে দেখে রাখা’র দায়িত্বে তাঁর গুণমুগ্ধ তরুণই" |
গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচতে উদ্বাস্তু শিবির থেকে পাড়ি জমান ঘানায়। সেখান থেকে কোনোরকমে উন্নত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে চলে আসেন কানাডায়। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি দারুণ ঝোঁক ছিল। মুগ্ধ হয়ে দেখতেন লিওনেল মেসির খেলা। হয়তো স্বপ্নও দেখতেন, ‘একদিন আমিও।’ কিন্তু ঝোঁক থাকলে কি হবে? অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য পছন্দের ক্লাবে যাওয়ার ভাড়াটুকুও থাকত না। ছিল না প্রয়োজনীয় ক্রীড়াসামগ্রী কেনার টাকাও।
কিন্তু টাকা না থাকলেই কি আর প্রতিভার ঔজ্জ্বল্য ঢেকে রাখা সম্ভব?
থাকতেন কানাডা এডমোন্টোনে। যেসব স্কুলছাত্ররা পয়সার অভাবে ক্লাবে গিয়ে খেলতে পারে না তাদের নিয়ে একটা লিগ আয়োজিত হয় সেখানে। সে লিগেই আলো ছড়িয়ে নজরে আসেন ডেভিস। যোগ দেন কানাডার ক্লাব ভ্যাণকুভার হোয়াইটক্যাপসে।এরপরের গল্পটা শুধুই উত্থানের। কানাডা ছেড়ে ডেভিস এখন জার্মানিতে। দেশটার সবচেয়ে শক্তিশালী দল বায়ার্ন মিউনিখের অন্যতম অস্ত্র তিনি। এই মৌসুমে যেভাবে খেলছেন, অনেকেই অনায়াসে তাঁকে বিশ্বের সেরা এক বা দুটি লেফটব্যাকের তালিকায় রাখছেন। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে এই ডেভিসই নামবেন বায়ার্নের হয়ে, লেফটব্যাক হিসেবে। প্রতিপক্ষ থাকবেন সেইউ মানুষ, যার খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে ফুটবলে নাম লেখানোর সাহস পেয়েছেন। তিনি লিওনেল মেসি। শৈশবের নায়ককে আটকানোর দায়িত্ব থাকবে তাঁর। ম্যাচের আগে সেটা নিয়েই কথা বলেছেন ডেভিস, ‘ছোটবেলায় ওর একটা খেলাও বাদ দিতাম না। সব খেলা দেখতাম। আর এখন আমি ওকে আটকানোর জন্য রক্ষণ করব। পুরোপুরি ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা হতে চলেছে আমার।’
নায়কের বিপক্ষে খেললেও ডেভিস যে বিন্দুমাত্রও ছাড় দেবেন না, তা তাঁর কথার মধ্যেই বোঝা গেছে, ‘আমার কাছে এটা শুধুই আরেকটা ম্যাচ। যে ম্যাচে আমি আমার মতোই খেলে যাব। আমার পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি হবে না। ওর বিপক্ষে যাতে আমি আমার সেরাটা দিতে পারি, সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে। ও অসাধারণ একজন খেলোয়াড়। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ওকে আটকানোর জন্য আমরা শুধু আমাদের সর্বোচ্চটুকুই দিতে পারি।’
পেশাদারির আড়ালেও ডেভিসের মধ্যে কী একটু হলেও উত্তেজনা কাজ করছে না? করছে অবশ্যই, 'এডমোন্টোনে যখন থাকতাম, প্রতি মঙ্গল বা বুধবারে বারোটার সময় ক্লাসরুমে আমরা খেলা দেখতাম। যে যাকে চাইতো সমর্থন করত। অসাধারণ লাগছে, সারা জীবন যাদের খেলা দেখে এসেছি এখন তাদের বিপক্ষে মাঠে নামব। সত্যি কথা বলতে কী, আমার বলার ভাষা নেই কোনো। আমার স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে।
গতকাল আমার মা আমাকে ফোন করলেন, কথা বলার একপর্যায়ে আমার বাবা ফোন নিয়ে আমাকে বলা শুরু করলেন, ‘‘তাহলে তুমি তোমার পছন্দের খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলতে চলেছ?'” শুনে আমি বললাম, ''হ্যাঁ''। বলে দুজনই হাসতে শুরু করলাম! উনি জানেন আমি ছোট থাকতে মেসির খেলা দেখতে অনেক পছন্দ করতাম। তাই সবার কাছেই ব্যাপারটা অসাধারণ লাগছে।
0 Comment "মেসিকে দেখে রাখা’র দায়িত্বে তাঁর গুণমুগ্ধ তরুণই"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন