যখন কথা বলি কম্পিউটার নিয়ে বা যেকোনো কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নিয়ে, যতোবেশি ততোই ভালো, তাই না? বেশিরভাগ ইউজারই কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের বেশি নাম্বারের পেছনে ছোটে, তবে একদিক থেকে ঠিকই আছে, সাধারনত ফাস্ট প্রসেসর সাথে বেশি ক্লক স্পীড মানে সেটা সত্যিই ভালো পারফর্মেন্স দেবে, কিন্তু র্যামের ব্যাপারটা একটু আলাদা। হ্যাঁ, বেশি পরিমানে র্যাম থাকাটা (বেশি গিগাবাইট) সত্যিই ভালো ব্যাপার, কিন্তু এখানে আরো বিষয় রয়েছে, র্যাম স্পীড সাথে র্যাম টাইমিং। র্যাম স্পীড রেটিং সম্পর্কে আপনাকে বোঝানোটা অনেক সহজ ব্যাপার, কিন্তু সেটা আপনার সিস্টেমের উপর কতোটা গুরুত্ব রাখে, এটা বোঝা কমপ্লেক্স ব্যাপার। চলুন, র্যাম স্পীডের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক, যাতে নতুন কম্পিউটার বিল্ড করার সময় কিংবা নতুন র্যাম কেনার সময় আপনার টাকা বেঁচে যেতে পারে সাথে আপনি কি কিনছেন, তার ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট ভালো ধারণা থাকে।
র্যাম স্পীড রেটিং
র্যাম স্পীড মানে কি? এটি অবশ্যই এর ডাটা ট্র্যান্সফার রেটকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ র্যামের স্পীড যতোবেশি হবে, আপনার কম্পিউটার তার লোকাল মেমোরিতে ততো দ্রুত ডাটা স্টোর করতে পারবে। বেশিরভাগ সময় আমরা শুধু র্যামের সাইজ এবং র্যামের ফ্রিকোয়েন্সির দিকেই নজর রাখি, মনে করি যতোবেশি ফ্রিকোয়েন্সি ততোদ্রুত র্যাম। হ্যাঁ, অনেকটা তাই-ই কিন্তু এছাড়াও অনেক আরো ব্যাপার রয়েছে যেগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। র্যাম কেনার সময় আমরা প্রায় একটি টার্ম বরাবরের মতোই মিস করে আসি, সেটার নাম “লেটেন্সি বা র্যাম টাইমিং“।
প্রত্যেকটি র্যামের গায়ে ফিজিক্যালি চার সংখ্যার সিরিজের একটি নাম্বার দেওয়া থাকে; যেমন- 3-4-4-8, 5-5-5-15, 7-7-7-21, অথবা 9-9-9-24। এই নাম্বার কালেকশন গুলো লেটেন্সিকেই নির্দেশ করে। ঠিক আছে, লেটেন্সি নিয়ে এখানে আরো বিস্তারিত আলোচনার করার আগে, ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে সামান্য একটু জেনে নেওয়া যাক, এতে লেটেন্সি বুঝতে সুবিধা হবে। ফ্রিকোয়েন্সি নির্দেশ করে র্যামটি প্রত্যেকটি সেকেন্ডে কতোগুলো অপারেশন সাইকেল হ্যান্ডেল করতে পারে। মনে করুণ একটি র্যাম ১,০০০ মেগাহার্জের উপর কাজ করে, অর্থাৎ এটি ১ সেকেন্ডে ১ বিলিয়ন (১ মেগাহার্জ = ১ মিলিয়ন) অপারেশন সাইকেল সম্পূর্ণ করতে পারবে। ঠিক এভাবেই র্যামের মেগাহার্জ যতোবেশি হবে, র্যাম কোন অপারেশন সাইকেল সম্পূর্ণ করতে ততোই কম সময় নেবে, কেনোনা একসাথে অনেক সাইকেল সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে, মানে আপনি এতে কম সময়ে অধিক কাজ করতে পারবেন।
এখন র্যাম ফ্রিকোয়েন্সির টাইমিং বেড় করা অনেক সহজ ব্যাপার, মনে করুণ একটি র্যাম ৩,০০০ মেগাহার্জ। তাহলে টাইমিং বেড় করতে ১ সেকেন্ডের সাথে ফ্রিকোয়েন্সিকে ভাগ করুণ; মানে T = 1/f, অর্থাৎ 1/3,000 = 0.33 ns। তাহলে এখানে ৩,০০০ মেগাহার্জ ক্লক সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে .৩৩ ন্যানো সেকেন্ড। কিন্তু এখানে আরেকটি উল্লেখ্য বিষয় রয়েছে। আপনার র্যামে যতোটুকু স্পীড রেট দ্বারা রেটিং করা থাকে, ব্যস্তবে তার অর্ধেক হয়ে থাকে। আপনার র্যামের ডিডিআর (DDR) শব্দের অর্থ হচ্ছে ডাবল ডাটা রেট; অর্থাৎ আপনার র্যামের স্পীড অর্ধেক হয় এবং সেটি ডিডিআর হওয়ার কারণে দ্বিগুণ স্পীড প্রদর্শন করে। আজকের দিনের র্যাম এক সাইকেলে দুইটি ডাটা প্রসেস করে,আর এভাবেই ডাবল ডাটা রেট সিস্টেম কাজ করে। তাহলে কি দাঁড়ালো? আপনার ৩,০০০ মেগাহার্জের র্যাম আসলে ১,৫০০ মেগাহার্জ হয়ে থাকে।
তাহলে এখন ভাবছেন, তাহলে র্যামের ফ্রিকোয়েন্সি যতোবেশি হবে ততোই ভালো, তাই না? জী না, সব সময়ই নয়! কেনোনা আপনাকে র্যামের ফ্রিকোয়েন্সির পাশাপাশি র্যাম লেটেন্সি’র দিকেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, যেটাকে র্যামের টাইমিংও বলা হয়। লেটেন্সিকে সাধারনত সিএল (CL) দ্বারা রেটিং করা থাকে, সিএস৫, সিএল১০ ইত্যাদি। লেটেন্সি হলো সেই সময়ের পরিমাপ যেটার মাধ্যমে সিপিইউ র্যামকে ডাটার রিকোয়েস্ট করে এবং র্যাম সেই ডাটা সিপিইউকে সরবরাহ করে। সিপিইউকে ডাটা প্রদান করতে এবং প্রত্যেকবার রিকোয়েস্ট গ্রহন করতে র্যামের কিছু সময় লাগে, আর একেই সিএল দ্বারা রেটিং করা হয়।
চলুন বিষয়টি আরো সহজ করে বোঝানোর চেষ্টা করছি। একটি ১,০০০ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি’র র্যাম নেওয়া যাক; যার ক্লক পিরিয়ড হবে ১ ন্যানো সেকেন্ড (উপরের অংক অনুসারে)। এবার ধরুন এই র্যামকে সিএল১০ দ্বারা রেটিং করা হয়েছে, অর্থাৎ এই র্যামের রেসপন্স টাইম হবে CL10x1 ns = 10 ns। মানে এই র্যামটি সিপিইউ থেকে রিকোয়েস্ট গ্রহন করতে এবং প্রসেস করে সিপিইউকে পাঠাতে ১০ ক্লক সাইকেল সময় দেরি করবে। এখন ধরুন আরেকটি র্যাম যেটার ক্লক স্পীড ২,০০০ মেগাহার্জ মানে এর ক্লক পিরিয়ড ০.৫ ন্যানো সেকেন্ড, কিন্তু ধরুন এই র্যামকে সিএল২০ দ্বারা রেটিং করা হয়েছে, তাহলে এর রেসপন্স টাইম আবার এসে দাঁড়ালো CL20x0.5 ns = 10 ns। দ্বিতীয় র্যামটি ফ্রিকোয়েন্সিতে বেশি হওয়ার পরেও এর পারফর্মেন্স কিন্তু একই হবে, কেনোনা এটি সময়ের মধ্যে রিকোয়েস্ট আদান প্রদান করবে।
তাহলে এখানে পরিষ্কার যে, শুধু র্যাম ফ্রিকোয়েন্সির দিকে তাকিয়ে কোন র্যামের পারফর্মেন্স নির্ণয় করা সম্ভব নয়। আপনাকে অবশ্যই র্যাম লেটেন্সির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দেখা যাচ্ছে আপনার হাই ফ্রিকোয়েন্সির সাথে হাই লেটেন্সি র্যাম লাগানো রয়েছে, কিন্তু এর চেয়ে লো ফ্রিকোয়েন্সি সাথে লো লেটেন্সি র্যাম একই পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম। আর বাজারে বিশেষ করে হাই ফ্রিকোয়েন্সি র্যামের দামও বেশি হয়ে থাকে, কিন্তু আপনি এখন জানলেন র্যাম টাইমিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
রিয়াল লাইফ পারফর্মেন্স
নিজের ব্যস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গেলে, ফ্রিকোয়েন্সি বা লেটেন্সি আপনার পার্সোনাল কম্পিউটার ইউজে তেমন বিশাল পার্থক্য এনে দেবে না। হ্যাঁ, লেটেন্সি এবং ফ্রিকোয়েন্সির সঠিক ব্যালেন্স অবশ্যই কম্পিউটারের পারফর্মেন্স বৃদ্ধি করে, কিন্তু আপনি সেটা বুঝতেই পারবেন না। কেনোনা কম্পিউটারের তুলনায় আমরা মানুষেরা অনেক স্লো কাজ করি, যেখানে কম্পিউটার সেকেন্ডে বিলিয়ন অপারেশন প্রসেস করে এবং ন্যানো সেকেন্ডের উপর কাজ করে, সেখানে আমরা সেকেন্ডের উপর মিনিটের উপর কাজ করি। তাই ন্যানো সেকেন্ডের পরিবর্তন বিশেষ করে আমাদের নজরে আসে না। আপনি কি বলবেন, “আরে আমার পিসির র্যামের ফ্রিকোয়েন্সি অনেক বেশি, তোমার পিসি থেকে আমার পিসিতে গুগল ক্রোম ০.৫৫ ন্যানো সেকেন্ড আগে ওপেন হয়!”? —এই স্পীডের কি কোন মূল্য আছে আমাদের কাছে? হ্যাঁ, সার্ভার গ্রেডের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা। কেনোনা সেখানে অনেক ক্লায়েন্ট থাকে, সেখানে সামান্য লেটেন্সিরও অনেক বিশাল ভূমিকা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু পার্সোনাল কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে এটা ব্যাপার না।
ফাস্ট র্যাম ব্যবহার করে ফাস্ট প্রসেসিং করার চেয়ে বেশিরভাগ ইউজারের জন্য বেশি পরিমানে র্যাম থাকাটায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন আপনাকে দুইটি অপশন দেওয়া হল, একটি ৮জিবি র্যাম সাথে ৩,২০০ স্পীড রেটিং এবং আরেকটি ১৬জিবি র্যাম সাথে স্পীড রেটিং ২,৪০০; এখানে আমি আপনাকে দ্বিতীয় অপশনটিই চয়েজ করতে বলবো। তবে অবশ্যই সব ক্ষেত্রে বেশি র্যাম উপযোগী নয়, তাই স্পীড রেটিং এর পেছনে খুব বেশি দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই, যদি ফ্রিকোয়েন্সির কথা ভাবেন তবে সেখানে লেটেন্সির কথা খেয়াল রাখবেন, সাথে বড় বেশি বড় সাইজের নিতে পারেন ব্যস্তব জীবনে ততোই উপকারী হবে।
তবে যে কম্পিউটার মেশিনে ডেডিকেটেড জিপিইউ নেই, সেখানে ফাস্ট র্যাম ভার্চুয়াল পারফর্মেন্স বাড়াতে সাহায্য করে। কেনোনা এই ধরনের কম্পিউটার সিস্টেম মেমোরির উপর নির্ভরশীল হয়, তার গ্রাফিক্স পারফর্মেন্স দেওয়ার জন্য। তাই যদি গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া কম্পিউটার তৈরি করতে যান, সেখানে ফাস্ট র্যাম রিয়াল লাইফে উপকারে আসবে। আবার আপনার পিসিতে যদি ভার্চুয়াল মেশিন রান করাতে চান, তবে ফাস্ট র্যাম এখানেও উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে। আর না হলে এমনিতে এর কোন সাধারন সুবিধা লক্ষ্য করতে পারবেন না।
র্যাম ম্যানেজমেন্ট
কম্পিউটার মাদারবোর্ড র্যাম স্লট সাধারনত র্যাম স্টিকের ম্যাক্সিমাম স্পীড রেটে র্যামকে পরিচালনা করতে পারে, কোন প্রকারের সমস্যা ছাড়ায়। ধরুন আপনার মাদারবোর্ড ডিডিআর৪ র্যাম এবং সাথে ৩,৬০০ মেগাহার্জ স্পীড পর্যন্ত সমর্থন করে, আর আপনার র্যামটি ডিডিআর৪ ২৪,০০ মেগাহার্জের, তো আরামে লাগিয়ে ফেলুন, আপনি সর্বদা মাক্স স্পীডই দেখতে পাবেন। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন, আপনার মাদারবোর্ড কেনার সময় র্যামের জন্য যে স্পীড রেটিং করা থাকে, সেটার সম্পূর্ণটা রিয়াল লাইফে পাওয়া যায় না। যদি আপনার মাদারবোর্ড ৩,৬০০ মেগাহার্জ স্পীড সমর্থনকারী হিসেবে রেটিং থাকে, তবে সেটা হয়তো ৩,৪০০ মেগাহার্জ পর্যন্তই কাজ করবে।
আবার ধরুন আপনার সিস্টেমে আগে থেকে একটি ২,৪০০ মেগাহার্জ স্পীডের র্যাম লাগানো রয়েছে এবং আপনি আরেকটি নতুন র্যাম লাগালেন যেটা ৩,০০০ মেগাহার্জ—ঠিক আছে, সমস্যা নেই, আজকের মাদারবোর্ড গুলো র্যাম ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে যথেষ্ট স্মার্ট কিন্তু যদি আপনার মাদারবোর্ড লো ফ্রিকোয়েন্সিকেই লক করে নেয়, তবে নতুন হাই ফ্রিকোয়েন্সির র্যাম কেনাতে আপনার কোন লাভ হবে না। তাই নতুন র্যাম কেনার সময় পুরাতনটির সাথে মিল রেখে কেনাটায় উত্তম।
Credit: Techtunes
Credit: Tahmid Borhan
0 Comment "র্যাম স্পীড (ফ্রিকোয়েন্সি) নাকি র্যাম টাইমিং (লেটেন্সি), কোনটি পারফর্মেন্সের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ?"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন